আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের তারিখ ঘোষণার ঠিক পূর্ব
মুহূর্তে আজ বৃহস্পতিবার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে
মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিট আবেগময়ী ও মর্মস্পর্শী
বক্তব্য রাখেন। নিজেকে বিশ্বাসের চূড়ান্ত
এবং শেষ স্তরে সপে দিয়ে মাওলানা সাঈদী অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করেন আমার বিরুদ্ধে
যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না
পারি। রোজ কিয়াকমতের দিন যেন রসুল (সা.)-এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না
হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি, আমার যে পরিমাণ চোখের
পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের
পানি ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোটা অভিশাপের
বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা এবং
কষ্ট ভোগের আগে যেন তাদের মৃত্যু না হয়। আর জাহান্নাম হয় যেন
তাদের চির ঠিকানা।
মাওলানা সাঈদী বলেন, যদি আমার প্রতি জুলুম করা হয় করা হয় তাহলে এ বিচারের দুইটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব
শেষ হবে। আর কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সেই বিচারে আমি হব
বাদী। আর আমার বিরুদ্ধে যারা জুলুম করেছে তারা হবে আসামী।
বিচার কার্যক্রম শেষে মাওলানা সাঈদীর তিন ছেলে, আত্মীয়স্বজন এবং আইনজীবীরা যখন তার
কাঠগড়ার সামনে যান তখন তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার সন্তানদের
মাথায় চুমু খান। আইনজীবী এবং অন্যদের সাথে করমর্দন করেন এবং দোয়া করেন। এরপর পুলিশ এসে তাকে হাজতখানায় নিয়ে যায়।
মাওলানা সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ ট্রাইব্যুনালে
সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের অনেক ভিড় ছিল। তিনি যখন কথা বলেন তখন পিনপতন নিরবতা বিরাজ করে ট্রাইব্যুনালে
। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থান শেষ হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে
আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুরোধ করেন মাত্র পাঁচ মিনিট মাওলানা সাঈদীকে কথা বলতে দেয়ার জন্য। মাওলানা সাঈদী এরপর
দাঁড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে বলেন পাঁচ মিনিট নয় মাত্র দুই থেকে আড়াই মিনিটে
আমি শেষ করতে পারব। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তাকে অনুমতি দেন। মাওলানা সাঈদী যা বলেছেন
আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের
এই বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগনের
নিকট অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এই মামলায় আমার নাম
বিকৃতি করে তদন্ত কর্মকর্তা কখনো দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, কখনো দেলু ওরফে দেইল্যা, দেউল্লা বলে আখ্যায়িত
করেছে আমাকে।
আমার বিরুদ্ধে চুরি
ডাকাতি,
জেনা ব্যাভিচার এর অভিযোগ আনছেন তিনি। তিনি ১২/১৪ বার পিরোজপুর
গেছেন। রাজনৈতিক কারনে বর্তমান সরকার দ্বারা প্ররোরিচত হয়ে তিনি এসব অভিযো এনেছেন। স্থানীয় এমপির সাথে
বসে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী সাবুদ তৈরি করেছেন।
রোজ কিয়ামতের ভয় আছে, পরকালে বিশ্বাস আছে
এমন কোনো মুসলমান কোনো মানুষের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারে না।
আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য
হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি । রোজ কিয়াকমতের দিন
যেন রসুল (সা) এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যদি আমার বিরুদ্ধে
আনীত অভিযোগ মিথ্যা হয় এবং যারা এ মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা
যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর
আমি এবং আমার সন্তানরা যে কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগ করেছে, আমার যে চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে
চোখের পানি ঝরেছে তার প্রতিটি ফোটা যেন অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শত গুন যন্ত্রনা
ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহতায়ালা যেনো তাদের মৃত্যু না দেন। মিথ্যাবাদীদের ওপর
আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয়
এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
আমার প্রতি যদি জুলুম
করা হয় তাহলে এ বিচারের দুউটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব
শেষ হবে। আর রোজ কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সেদিন রাজাধিরাজ, সকল সম্রাটদের সম্রাট, সকল বিচারকরদের বিচারপতি, আসমান ও জমিনের মালিক মহান
আল্লাহ হবেন বিচারপতি। যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন
হয়ে আমার প্রতি জুলুম করা হয় তাহলে আমার প্রতি যারা মিথ্যাচারের
আশ্রয় নিয়েছেন, আজ এখানে যারা আছেন তারা হবেন আসামী। আর আমি হব বাদী। আপনাদের তিনজনের প্রতি
আমি আশা রেখে বলছি আপনাদের ন্যায়বিচারের তৌফিক দান করুন আল্লাহ।
0 Comments